“মুহাম্মদ মেহেদী হাসান”
জাতির পিতার জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে লিখাঃ যত দিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান তত দিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান , কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের শালী ধানের চিড়ে ছড়া কাব্যে বঙ্গবন্ধু কবিতার উদ্ধৃতি দিয়েই বলতে হয় বাংলাদেশ ইতিহাস ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি দেশ জাতি জাতীয়তা যা কিছুই বলি না কেন বাংলার রাখাল রাজা খ্যাত অবিসংবাধিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম যদি না হত তাহলে হয়ত পশ্চাৎ পদ এই বাঙ্গালী জাতির ভাগ্যের আকাশে আদৌও স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা উড়ত কিনা তা শুধু সন্দেহই নয় মুটামটি নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে, আমরা আদ্যবদি পাকিস্তানি শাসকদের অধিনেই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবেই থেকে যেতাম । যাহোক, বঙ্গবন্ধু তথা জাতির জনকের ব্যাক্তিগত এবং রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলার আগে পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছু জানা দরকার । জন্ম জন্ম স্থান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম ১৭ ই মার্চ গোপালগঞ্জ মহাকুমা (বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলা) ফরিদপুর জেলার একটি অজ পাড়াগাঁও টুঙ্গিপাড়ার মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তাঁর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান, মায়ের নাম সায়েরা খাতুন, দাদার নাম আব্দুল হামিদ শেখ নানার নাম আব্দুল মজিদ। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সবার বড়, এ জন্য সবাই তাকে মিয়া ভাই বলে ডাকতেন। মধুমতি নদী গড়াই নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে মাগুড়া জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়ন দিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা এবং খুলনা জেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাগের হাটের শৈলদাহ নদীতে মিলিত হয়েছে । টুঙ্গী পাড়ার কোল ঘেঁষে প্রবাহিত হওয়ার কারণে এ নদীর সাথে বঙ্গবন্ধুর বল্য কালের অনেক স্মৃতি বিজড়িত আছে । দুরন্ত প্রকৃতির একটু একঘেয়েমি পরোপকারী স্বভাবের হওয়ার কারণে ছোট বেলা থেকেই পিতা মুজিব অতিসহজে এলাকার সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং এলাকার সজ্জন ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিত পায়। বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বৃটিশ আমলের আগে বা সমসাময়িক সময়ে তাঁর পূর্বপুরুষ মধ্যপ্রাচ্যের কোন এক দেশ বা ইরাক থেকে এ দেশে সম্ভবত ধর্ম প্রচারের উদ্দ্যেশে আসেন। প্রথম যার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর নাম বোরহানউদ্দিন শেখ তার পর তিন চার জেনারেশনের কোন তথ্য প্রমান পাওয়া যায় না। তিন চার জেনারেশন পরে শেখ কুদরতউল্লাহ এবং এবং শেখ একরামউল্লাহ নামক দুই ভায়ের থেকে মুটামুটি দারাবাহিক ভাবে ইতিহাস জানা যায় । এই দুই ভায়ের আমলে শেখ পরিবারের যে অর্থ বিত্ত এবং জমিদারী প্রভাব ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায় ।তবে কালের পরিক্রমায় শেখ পরিবার যে একসময় জমিদারী প্রথা থেকে বের হয়ে সাধারণ মানুষের কাতারে দাড়িয়েছিল তা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্নজীবনী পড়লে সহজেই অনুমান করা যায় । তবে কালের পরিক্রমায় তাঁদের পরিবার আর্থিক সংকটের মুখে পড়লেও জমিদারী ভাব ধারা যে বঙ্গবন্ধুর শরীরে প্রবাহমান তা তার চারিত্রিক গুনাবলি এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখলে বুজতে বাঁকি থাকে না । বঙ্গবন্ধুর জীবন ইতিহাস পড়লে সত্যই বিশ্ময় হতে হয় এই ভেবে যে কি ভাবে, একটা মুখথুবরে পড়া মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে, সেই পরিবার তথা একটা পশ্চাৎপদ জাতি বা একটি অবহেলিত অধিকার বঞ্চিত সমাজ বা দেশকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তা সত্যই এক বিশ্ময়কর ব্যাপার। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে, ঐশ্বরিক ক্ষমতা প্রাপ্ত নবী রাসুল বা ধর্ম জাজোক ছাড়া বৈষয়িক জগতে মানুষের যত কৃস্টি কালচার বা নতুন চিন্তা চেতনা ধ্যান ধারণা বা কর্মের মাধ্যমে যারা ইতিহাস সৃস্টি করে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ রাস্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান বা জাতির পিতা উপাধি পেয়ে আমর হয়ে আছেন তাদের মধ্যে পাশ্চাত্য দেশ গুলোতে বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য হলেন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন,বৃটিশ প্রধান মন্ত্রী চার্চিল, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নেলসন মেন্ডেলা, যুগস্লোভিয়ার প্রেসিড্ন্ট মার্শাল ব্রজ টিটো কিউবার নেতা ফিদেল কাস্টে এবং প্রাচ্যের দেশ গুলোতে বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য হলেন ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধি সুভাস বসু এবং পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলি জিন্না । প্রত্যেকের রাজনৈতিক এবং পারিবারিক হতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রায় সবারই পারিবারিক রাজনীতির এবং অর্থনীতির একটি বিশাল ইতিহাস আছে। প্রত্যেকের রাজনৈতীক দর্শন ছিল কোন একটি বিশেষ বিষয়ে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতির দর্শন ছিল একটি অনগ্রসর জাতিকে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দেশ গুলোর সাথে ভূরাজনৈতিক সুসম্পর্ক গড়ে তুলা । উপড়ে উল্লেখিত মহান ব্যাক্তিদের রাজনৈতিক দর্শন এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের তুলানামুলক আলোচনা করে বিষয়টা পরিষ্কার করা যায়- আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জজ ওয়াসিংটন কে আমেরিকার জাতির পিতা বলা হয়। জজ এয়াসিংটন বৃটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমেরিকা বৃটিশদের থেকে দখল মুক্ত করেন ১৭৭৭ সালে, সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে আমেরিকার স্বাধিনতা এনে দিয়েছিলেন বলে জজ ওয়াসিংটন কে আমেরিকার জাতির পিতা বলা হয় । অন্যদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনকে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বিচক্ষণ এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাস্ট্র প্রধান বলা হয়। আব্রাহাম লিঙ্কনের উল্লেখ যোগ অবদান হল দাসপ্রথার বিলুপ্ত সাধন ১৮৬৩ সালের ১লা জানুয়ারী তিনি আইন সভায় দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেন। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকানরা তা মেনে নিতে পারে নি। তাঁরা বিভক্ত হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে আমেরিকাকে বিভক্ত করে। পরবর্তীতে এই অভ্যন্তরীণ বিরোধ গৃহযুদ্ধ সূচনা করে। ১-৩ জুলাই তারিখে যুক্ত রাস্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার গেটির্সবাগে, এই গৃহযুদ্ধে প্রায় আট হাজার মানুষ নিহত হয়। ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩ সালে এক স্মরণসভায় আব্রাহাম একটি সংক্ষিপ্ত ও দুনিয়া কাঁপানো ভাষণ দেন। মাত্র দুই মিনিটে ২৭২ শব্দের এই বিখ্যাত ভাষণটি গেটিসবার্গ স্পিচ। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ।এ ভাষণটি গ্রিনিচ ওয়াল্ড বুকে,