,

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান

“মুহাম্মদ মেহেদী হাসান”

জাতির পিতার জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে লিখাঃ যত দিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান তত দিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান , কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের শালী ধানের চিড়ে ছড়া কাব্যে বঙ্গবন্ধু কবিতার উদ্ধৃতি দিয়েই বলতে হয় বাংলাদেশ ইতিহাস ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি দেশ জাতি জাতীয়তা যা কিছুই বলি না কেন বাংলার রাখাল রাজা খ্যাত অবিসংবাধিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম যদি না হত তাহলে হয়ত পশ্চাৎ পদ এই বাঙ্গালী জাতির ভাগ্যের আকাশে আদৌও স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা উড়ত কিনা তা শুধু সন্দেহই নয় মুটামটি নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে, আমরা আদ্যবদি পাকিস্তানি শাসকদের অধিনেই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবেই থেকে যেতাম । যাহোক, বঙ্গবন্ধু তথা জাতির জনকের ব্যাক্তিগত এবং রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলার আগে পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছু জানা দরকার । জন্ম জন্ম স্থান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম ১৭ ই মার্চ গোপালগঞ্জ মহাকুমা (বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলা) ফরিদপুর জেলার একটি অজ পাড়াগাঁও টুঙ্গিপাড়ার মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তাঁর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান, মায়ের নাম সায়েরা খাতুন, দাদার নাম আব্দুল হামিদ শেখ নানার নাম আব্দুল মজিদ। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সবার বড়, এ জন্য সবাই তাকে মিয়া ভাই বলে ডাকতেন। মধুমতি নদী গড়াই নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে মাগুড়া জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়ন দিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা এবং খুলনা জেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাগের হাটের শৈলদাহ নদীতে মিলিত হয়েছে । টুঙ্গী পাড়ার কোল ঘেঁষে প্রবাহিত হওয়ার কারণে এ নদীর সাথে বঙ্গবন্ধুর বল্য কালের অনেক স্মৃতি বিজড়িত আছে । দুরন্ত প্রকৃতির একটু একঘেয়েমি পরোপকারী স্বভাবের হওয়ার কারণে ছোট বেলা থেকেই পিতা মুজিব অতিসহজে এলাকার সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং এলাকার সজ্জন ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিত পায়। বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বৃটিশ আমলের আগে বা সমসাময়িক সময়ে তাঁর পূর্বপুরুষ মধ্যপ্রাচ্যের কোন এক দেশ বা ইরাক থেকে এ দেশে সম্ভবত ধর্ম প্রচারের উদ্দ্যেশে আসেন। প্রথম যার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর নাম বোরহানউদ্দিন শেখ তার পর তিন চার জেনারেশনের কোন তথ্য প্রমান পাওয়া যায় না। তিন চার জেনারেশন পরে শেখ কুদরতউল্লাহ এবং এবং শেখ একরামউল্লাহ নামক দুই ভায়ের থেকে মুটামুটি দারাবাহিক ভাবে ইতিহাস জানা যায় । এই দুই ভায়ের আমলে শেখ পরিবারের যে অর্থ বিত্ত এবং জমিদারী প্রভাব ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায় ।তবে কালের পরিক্রমায় শেখ পরিবার যে একসময় জমিদারী প্রথা থেকে বের হয়ে সাধারণ মানুষের কাতারে দাড়িয়েছিল তা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্নজীবনী পড়লে সহজেই অনুমান করা যায় । তবে কালের পরিক্রমায় তাঁদের পরিবার আর্থিক সংকটের মুখে পড়লেও জমিদারী ভাব ধারা যে বঙ্গবন্ধুর শরীরে প্রবাহমান তা তার চারিত্রিক গুনাবলি এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখলে বুজতে বাঁকি থাকে না । বঙ্গবন্ধুর জীবন ইতিহাস পড়লে সত্যই বিশ্ময় হতে হয় এই ভেবে যে কি ভাবে, একটা মুখথুবরে পড়া মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে, সেই পরিবার তথা একটা পশ্চাৎপদ জাতি বা একটি অবহেলিত অধিকার বঞ্চিত সমাজ বা দেশকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তা সত্যই এক বিশ্ময়কর ব্যাপার। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে, ঐশ্বরিক ক্ষমতা প্রাপ্ত নবী রাসুল বা ধর্ম জাজোক ছাড়া বৈষয়িক জগতে মানুষের যত কৃস্টি কালচার বা নতুন চিন্তা চেতনা ধ্যান ধারণা বা কর্মের মাধ্যমে যারা ইতিহাস সৃস্টি করে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ রাস্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান বা জাতির পিতা উপাধি পেয়ে আমর হয়ে আছেন তাদের মধ্যে পাশ্চাত্য দেশ গুলোতে বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য হলেন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন,বৃটিশ প্রধান মন্ত্রী চার্চিল, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নেলসন মেন্ডেলা, যুগস্লোভিয়ার প্রেসিড্ন্ট মার্শাল ব্রজ টিটো কিউবার নেতা ফিদেল কাস্টে এবং প্রাচ্যের দেশ গুলোতে বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য হলেন ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধি সুভাস বসু এবং পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলি জিন্না । প্রত্যেকের রাজনৈতিক এবং পারিবারিক হতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রায় সবারই পারিবারিক রাজনীতির এবং অর্থনীতির একটি বিশাল ইতিহাস আছে। প্রত্যেকের রাজনৈতীক দর্শন ছিল কোন একটি বিশেষ বিষয়ে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতির দর্শন ছিল একটি অনগ্রসর জাতিকে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দেশ গুলোর সাথে ভূরাজনৈতিক সুসম্পর্ক গড়ে তুলা । উপড়ে উল্লেখিত মহান ব্যাক্তিদের রাজনৈতিক দর্শন এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের তুলানামুলক আলোচনা করে বিষয়টা পরিষ্কার করা যায়- আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জজ ওয়াসিংটন কে আমেরিকার জাতির পিতা বলা হয়। জজ এয়াসিংটন বৃটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমেরিকা বৃটিশদের থেকে দখল মুক্ত করেন ১৭৭৭ সালে, সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে আমেরিকার স্বাধিনতা এনে দিয়েছিলেন বলে জজ ওয়াসিংটন কে আমেরিকার জাতির পিতা বলা হয় । অন্যদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনকে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বিচক্ষণ এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাস্ট্র প্রধান বলা হয়। আব্রাহাম লিঙ্কনের উল্লেখ যোগ অবদান হল দাসপ্রথার বিলুপ্ত সাধন ১৮৬৩ সালের ১লা জানুয়ারী তিনি আইন সভায় দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেন। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকানরা তা মেনে নিতে পারে নি। তাঁরা বিভক্ত হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে আমেরিকাকে বিভক্ত করে। পরবর্তীতে এই অভ্যন্তরীণ বিরোধ গৃহযুদ্ধ সূচনা করে। ১-৩ জুলাই তারিখে যুক্ত রাস্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার গেটির্সবাগে, এই গৃহযুদ্ধে প্রায় আট হাজার মানুষ নিহত হয়। ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩ সালে এক স্মরণসভায় আব্রাহাম একটি সংক্ষিপ্ত ও দুনিয়া কাঁপানো ভাষণ দেন। মাত্র দুই মিনিটে ২৭২ শব্দের এই বিখ্যাত ভাষণটি গেটিসবার্গ স্পিচ। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ।এ ভাষণটি গ্রিনিচ ওয়াল্ড বুকে,

আমরা যদি বঙ্গবন্ধু এবং নেলসন মেন্ডেলার রাজনৈতিক এবং ব্যাক্তিগত জীবন পর্যালোচনা করি তাহলে দেখাতে পাই , দক্ষিণ আফ্রিকায় যুগ যুগ ধরে বর্ণবাদ প্রথা চালু ছিল বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃঞ্চাঙ্গদের মধ্যে বর্ণবৈষম্য। সে দেশে শ্বেতাঙ্গরা কৃঞ্চাঙ্গদেরকে হেয় প্রতিপূন্ন করত এবং কৃঞ্চাঙ্গদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করত, যেমন ভোট অধিকার, নির্বাচন করার অধিকার মত প্রকাশের অধিকার। সরকার আইন করে এএনসি বন্ধ করে দিয়ে ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদীত নেত নেলসন মেন্ডেলা কে যে আদালত যাবৎজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছিল সে আদালত কে রিভোনিয়া ট্রাইবুনাল বলা হয়। ১৯৬৩ সাল জোহানেসবার্গের রিভোনিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) ১০ নেতাকে। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা হয় বিদেশি যোগসাজশে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র, কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ। এই মামলার বিচার কার্যক্রম রিভোনিয়া ট্রায়াল নামে পরিচিত, যা ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে আছে আদালতে দেওয়া নেলসন ম্যান্ডেলার তিন ঘণ্টা দীর্ঘ ভাষণের জন্য। রিভোনিয়ায় গ্রেপ্তার ১০ এএনসি নেতার মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন না। ১৯৬২ সালে অনুরূপ একটি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মাদিবা তখন পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ কাটাচ্ছেন। রিভোনিয়া বিচার শুরু হয় ১৯৬৪ সালে।আদালতে দাঁড়িয়ে ম্যান্ডেলা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায় নিয়ে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) প্রতিষ্ঠাকাল থেকে উমখনটো প্রতিষ্ঠার কার্যকারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি পরবর্তী সম্ভাব্য কর্মসূচি হিসেবে এএনসি যে গেরিলা যুদ্ধের কথাও ভেবেছে, তারও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি এএনসির প্রতি পুরো আফ্রিকা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ও ব্রিটিশ রাজনীতিক গেইটসকেল ও গ্রিমন্ডের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথাও। কথা হচ্ছে এই সব তিনি কী কারণে এতটা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরলেন? আদালতে তিনি ও তাঁর সহঅভিযুক্তরা শুধু নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থন করলেই পারতেন। এটিই বরং তাঁদের আইনি সুরক্ষা দিতে পারত বেশি। কিন্তু ম্যান্ডেলা, ভবিষ্যৎ আফ্রিকার মাদিবা সেই পথে হাঁটলেন না। তিনি বরং আদালতে কথা বলার সুযোগটি নিতে চাইলেন, যার মাধ্যমে তিনি তখনকার দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের নিপীড়ক চরিত্র উন্মোচনের পাশাপাশি একটি বর্ণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে ছড়িয়ে দেন। ওই দিনের বক্তব্যে মাদিবা পুরো আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক চিত্রও তুলে ধরেন। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য এবং এই বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে প্রণীত বিভিন্ন আইনের উল্লেখ করে তিনি শেষ পর্যন্ত ‘শ্রেণিহীন সমাজ’-এর প্রতি নিজের পক্ষপাতের কথা তুলে ধরেন। তিন ঘণ্টার এই বক্তব্যে কার্ল মার্কসের প্রসঙ্গ এসেছে। এসেছে মহাত্মা গান্ধীসহ বিশ্বের অন্যান্য মহান নেতার কথা। ছিল ম্যাগনা কার্টাসহ গণতন্ত্রের সনদগুলোর উল্লেখ। অনেকটা বিদায়ী ভাষণের মতো করে দেওয়া সেই বক্তব্যের শেষ অংশটি ছিল সর্বতোভাবেই ঐতিহাসিক। বক্তব্যের একেবারে শেষে এসে মাদিবা বললেন, ‘আফ্রিকার মানুষের লড়াইয়ের জন্য আমি আমার এই পুরো জীবন উৎসর্গ করেছি। আমি শ্বেতাঙ্গ কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়েছি, লড়েছি কৃষ্ণাঙ্গ কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধেও। আমি সেই গণতান্ত্রিক ও মুক্ত সমাজের জয়গান গেয়েছি, যেখানে সবাই সমান সুযোগ নিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে একসঙ্গে থাকবে। এটা এমন এক আদর্শ, যা আমি অর্জন করতে চাই, যার জন্য বাঁচতে চাই আমি। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, এটি সেই আদর্শ, যার জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত।’ এই বিচার শুরুর আগেই গুঞ্জন ছিল যে, অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলার এই ভাষণে এমন কিছু ইঙ্গিত ছিল, যা শাসকগোষ্ঠীকে এমন পদক্ষেপ নিতে বারিত করেছে। ফলে সরকারি কৌঁসুলি আদালতে এমনকি অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি শোনানোর আবেদনও করেননি। শেষ পর্যন্ত আদালত নেলসন ম্যান্ডেলাসহ অন্য অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল। (উৎস প্রথম আলো ও ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল) জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতীক জীবন এবং মাদিবার রাজনৈতিক জীবন যেন একই মুদ্রার এ পিট ও পিট। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুসহ আসামী ছিল ৩৫ জন। মিথ্যা মামলায় বঙ্গবন্ধুকে আটক করা হল। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুসহ সকল আসামীদের বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহ মামল দিলেন, আসাম ত্রিপুরা সহ ভারত সরকারের সাথে আতাত করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে আসামীদের প্রেপ্তার করা হল । অথচ আগরতলার আলোচনার বিষয় ছিল ছয় দফার ভিত্তিতে কি ভাবে বাঙ্গালীর অধিকার এবং দাবী পূরণ করা যায় সে বিষয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয় ১৮ ই জানুয়ারী ১৯৬৮ সালে । আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী সার্জেন জহুরুল হককে জেল খানায় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে নির্মম ভাবে হত্যা করার প্রতিবাদে সারা দেশে আন্দোলন বেগবান হয়ে পরে। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে বলে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সর্বোশ্রেষ্ঠ গাইড ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, সকল নেতারা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি নেওয়ার অনুরোধ করলেও বঙ্গমাতা সেদিন জেলখানায় স্পস্ট জানিনেয় আসেন নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে জেল থেকে বের হবেন না। অবশেষে ১৯৬৯ সালে ২২ সে ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারী ছাত্রনেতা তুফায়েল অহম্মেদ পল্টন ময়দানে জাতির জনকে বঙ্গবন্ধু উপাদিতে ভূষিত করেন । এর পরের বছর ৩রা মার্চ ১৯৭০ সালে আ স ম আব্দুর রব বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনকের উপাধি দেন। বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতার পরামর্শ শুনতেন তাঁর উপড় আস্তা রাখতেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতার সেই অমর বানীই যেন বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং কর্মে আলোর পথ প্রদর্শক ছিল। কোন কালে এক হয়নিকো বিজয় পুরুষের তরবারি, উৎস দিয়েছে প্রেরণা দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী। বঙ্গবন্ধুর জীবন আলোচনা করলে দেখা যায় জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্র বঙ্গমাতা একজন মহিয়সী নারী হিসেবে ছায়ার মত পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুকে শক্তি সাহস এবং উৎসাহ দিয়েছেন । আমাদের স্বাধীনতার অমর কাব্য ৭ ই মার্চে,
বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর একজন অনুসারী, বঙ্গবন্ধু মনে প্রাণে গান্ধীজির অসহিংবন নীতি বা রাজনীতিতে সহিংস ভাব পরিহার করার পক্ষপাতী ছিলেন তাঁর রাজনৈতীক চিন্তা চেতনায় তিনি কবি নজরুলের সাম্যের জয় গান করে গেছেন, তিনি বিশ্বাস করতেন রাস্ট্র দেশ স্বাধীনতা সব কিছুর মূল হতে হবে মানুষের সেবা। কবি নজরুলের মত তিনি লিখতে পারেন নাই, গাহি সাম্যের গান মনুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান, হিন্দু মুসলিম ভাই সবার উপড়ে মানুষ সত্যতার উপড়ে নাই। যাহোক বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক দর্শনে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর অসহিংস নীতি অনুসরণ করতেন যে কারণে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে বাংলাদেশ সৃস্টি পর্যন্ত এমনকি তিনি তার জীবদ্দশায় সকল ক্ষেত্রে অসহিংস নীতি মেনে রাজনীতি করে গেছেন ।মহাত্না গান্ধীকে ভারতের জাতির পিতা বলা হলেও, সাংবিধানিকে ভাবে তার কোন স্বীকৃতি নেই, বলা হয়ে থাকে নেতাজি সুভাষ চঁন্দ্র বসু সিঙ্গাপুর থেকে বেতারে মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে প্রথম মহাত্মা গান্ধীক জাতির পিতা উপাধিতে ভূষিত করেণ। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনী বয়ে বলেছেন ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বর্তমান মওলানা আজাদ কলেজে ভর্তি হন, সেখানে তিনি ১৯৪২ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত পড়ালেখা করে স্নাতক পাশ করেন, তিনি সেখানে বেকার হোস্টেলে ২৪ নং কক্ষে থাকতেন যেটা যতিবসু সরকার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির স্মরণে ২৩ এবং ২৪ নং রুম স্মৃতি রুম হিসেবে সংরক্ষণ করেছেন এবং একবার কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর সাথে বঙ্গবন্ধুর প্রথম দেখা হয় ১৯৪৬ সালে ব্যারাকপুর কোন এক রবিবার, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে সেখেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার দুবছর পর ১৯৪৮ খ্রিঃ ৩০ শে জানুয়ারী দিল্লিতে এক প্রার্থনা সভা গান্ধীজি এক আততায়ীর হাতে নিহত হন । বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন এবং মাহাত্ম গান্ধীর রাজনৈতিক দর্শন অনেক ক্ষেত্রে বেশ মিল থাকলেও সাহসিকতার দিক থেকে পরিস্থিতির বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনেক পরিপক্ক এবং যে কোন পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিয়ে দূত্ব সব কিছু নিজের অনুকুলে নিয়ে আসতে পারতেন। মহাত্মা গান্ধীর অসহিংস রাজনৈতিক মতাদর্শ বঙ্গবন্ধু বুকে ধারণ করে নিজের জ্ঞান বুদ্ধি এবং প্রঙ্গা অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষাণী এব বঙ্গবন্ধু জুনিয়র নেতা হিসেব যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন করেন। তখন সারা পৃথিবী ব্যাপি সমাজতান্ত্রীক ধারার জয় জয়কার অবস্থা। বঙ্গবন্ধু উদার গণন্ত্রে বিশ্বাসী হলেও সমাজতান্ত্রীক অর্থনীতি এবং সমাজন্ত্রের প্রতি বিশেষ করে কালসবাদ নীতির প্রতি বেশ দূর্বলতা ছিল কিন্তু তিনি সব কিছুর মুলে মানব সেব মানব কল্যান এবং মানুষের বিশ্বাসই রাজনীতির মুল কথা বলে বিশ্বাস করতেন এবং যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মানুষের মন সহজেই জয় করতে পারতেন। যে জন্য তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অনেক ছোট ছোট ঘটনা গুলো অনেক বড় সফলতা এনে দিয়েছিল। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্টে ভাসানী সাহেবের সাথে নির্বাচন করেছিলেন। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু একদিন খুলনা নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা করতে যেয়ে দেখতে পেলেন কমনিস্টবাদীরা খুলনাতেও যুক্তফ্রন্টকে বয়কট করার জন্য উঠেপরে লেগেছে, সম্ভবত বঙ্গবন্ধুকে তারা তাদের সাথে কোন একটা বিষয়ে আপোষ করতে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আপোষ করতে রাজি না হওয়ায় খুলনার জনগন তার বিরূদ্ধে ক্ষেপে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু পরিস্থিতি বুঝে কমনিস্টবাদীদের বিপক্ষে বলে উঠলেন যারা মস্কোতে বৃস্টি হলে খুলনাতে ছাতা ধরে আমি তাদের সাথে কোন আপোষ করতে পারি না । এক কথা শুনার পর পুরা ময়দান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্লোগান দিতে লাগলেন। যাহোক বঙ্গবন্ধু ১৯৪২ সাল থেকে বিশেষ করে কলকাতা যাওয়ার পর থেকে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশ গ্রহন করেন এবং শের এ বাংলা এক ফজলুল হক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং অন্যান্য সিনিয়র রাজনৈতিক নেতাদের দিক নির্দেশনা সব সময় অনুসরণ করতেন এবং কোন অবস্থাতেই নিজেকে সহিংস পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতেন না । তিনি বহুবার বিভিন্ন বক্তিতায় বলেছেন আমি বাঙ্গালী আমি মুসলমান। তাঁর সক্রিয় রাজনীতির শুরু থেকেই বিশেষ করে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যখন থেকে সক্রিয় ভুমিকা রাখা শুরু করেছিলেন তখন থেকে তিনি মুসলিম সংখাগরিষ্ঠতা এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনুসারে দেশ বিভাজনের নীতি বিশ্বাস করতেন এবং বাংলা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছেন। বঙ্গবন্ধু ধর্ম নিরপেক্ষতা বিশ্বাস করলেও একজন ধর্ম প্রান মুসলমান হিসেবে তিনি ইসলাম ধর্মের মুল আদর্শ থেকে কখনই নিজেকে বিচ্যুৎ করেন নাই এবং তিনি তাঁর জীবদ্দশায় কখনও কোন পরিস্থিতিতে অন্যের উপড় নিজের বিশ্বাস এবং মতাদর্শকে চাপিয়ে দেওয়ার চেস্টা করেন নাই। যে কারণে তিনি তাঁর রাজনীতির শুরু থেকে একটা কথা সবসময় বলতেন কেউ যদি ন্যায্য কথা বলে, সে যদি একজনও হয় তার কথা বা মতামত গ্রহন করা হবে। দেশ বিভাজনের পর বঙ্গবন্ধু সর্বদাই পাকিস্তান সরকারের সাথে ন্যায় নীতি আদর্শ এবং জনগনের মতামতের ভিত্তি পাকিস্তান সরকারের সাথে সহিংস নীতি পরিহার করে আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে পূর্ববাংলা পরিচালনা করার চেস্টা করেছেন কিন্তু পাকিস্তান সরকার সর্বদাই জোর জুলুম এবং নির্যাতনের মাধ্যমে নিজেদের মতাদর্শেকে বাঙ্গালীদের উপড় চাপিয়ে দেওয়ার চেস্টা করেছে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু মহাত্মা গান্ধীর মত সহিংস রাজনীতি পছন্দ করতেন না এবং জনগনের আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করতেন তাই সর্বদাই তিনি তাঁর মতামতকে জনগনের মতামত যাচায়ের উপড় ছেড়ে দিতেন। যেমন ছয় দফা দাবীর জন্য পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুসহ সকল আসামীদের বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহ মামলা করল কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছয় দফাকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মেনুফেস্টোতে দিয়ে জনগনের ভোটের মাধ্যমে জনগনের দাবীতে পরিনত করলেন যা কিনা ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধার অন্যতম ভিত্তি হয়ে দেখা দিল। বাস্তব


More News Of This Category